মৌলভীবাজারে বন্যা: বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা:: দু’দিন ধরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতি। বন্যার উন্নতি হলেও বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির জন্য। জায়গা বিশেষে বন্যার স্থায়িত্ব ৪ থেকে ৬ দিন অতিক্রম করলেও অনেক জায়গায় প্রতিনিধি পর্যায়েই পৌঁছায়নি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট।
এবারের হঠাৎ বন্যায় পানিবন্দি হয় জেলার ৩৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ মানুষ। এতে দুর্গত এলাকায় ভেঙে গেছে বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার করছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। আর এজন্য দায়ী করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উদাসীনতা আর অব্যবস্থাপনাকে।
কুলাউড়া উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জোনাব আলী জানান, ৬ দিন যাবৎ অন্তত ৪০টি গ্রাম পানিবন্দি কিন্তু এখন পর্যন্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাইনি।
জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে, জেলায় ৪০ হাজারের উপরে পরিবার পানিবন্দি থাকলেও জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জানিয়েছেন মাত্র ৮০৬টি টিউবওয়েলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, ৪০ হাজার পরিবারের বিপরীতে হিসাব করলে এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন ভিত্তিক দুর্গত গ্রামের হিসাবে সেটা ৫ হাজারের উপরে। জেলার ক্ষতিগ্রস্ত স্যানিটেশন নিয়েও কোনো সঠিক হিসাব নেই এই কর্মকর্তার কাছে।
সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মৌলভীবাজার পরিদর্শনকালে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণের বিষয়ে চনতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জানান, ১০ হাজার ট্যাবলেট নিজেরা বিলি করেছেন, সিভিল সার্জনকে দিয়েছেন ১০ হাজার আর মজুদ আছে ৬ হাজার। ২ লাখ পানিবন্দি মানুষের জন্য মাত্র ১০ হাজার আর মজুদে মাত্র ৬ হাজার ট্যাবলেট আছে জেনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মন্ত্রীর সফরের আগে জেলার কোথাও বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করাই হয়নি।
কমলগঞ্জের পতনউষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তৌফিক আহমেদ বাচ্চু বলেন, আমি মন্ত্রীর সফরের পর ২ হাজার বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট পেয়েছি। শুনেছি মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন দ্রুত পৌঁছাতে।
একই কথা বলেন সদর উপজেলার মনুরমুখ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হক শেফুল।
তবে ইউনিয়ন পর্যায়ে গেলেও সেগুলো সাধারণ মানুষের হাতে এখনও যায়নি। ফলে বানের পানি খেতেই বাধ্য হচ্ছেন দুর্গত এলাকার মানুষ।
আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিশুদ্ধ পানি পান না করায় মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে পানিবাহিত রোগ। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাঈদ এনাম জানান, বন্যার পানি খেলে ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট ফুটিয়ে খেতে হয়। তবে পানিবন্দি মানুষের সে সুযোগ না থাকায় দূষিত পানি খেলে ডাইরিয়া, আমাশয়সহ নানা রোগ হতে পারে।
এ বিষয়ে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সোহরাব উদ্দিন আহমদ বলেন, বিভিন্ন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে ১৭ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেছি। ত্রাণমন্ত্রীর সফরের পর আরও ১ লাখ ট্যাবলেট এসেছে। সেগুলো মজুদ আছে।
জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম জানান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ, স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য সব ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।