আমার প্রিয় গ্রাম দলইর গাঁও
Nurul Muttakin ::নিজের গ্রাম মানেই অন্যরকম মায়া। এর আলো বাতাস গায়ে লেগেই আমি বড় হয়েছি। আমি আমার নিজের গ্রাম সম্পর্কে এটুকূ গর্ব করে বলতে পারি বেশ ঐতিহ্য সম্বলিত আমার দলইর গাঁও গ্রাম ।কারণ আমি আমার শৈশব কাটিয়েছি গ্রামের পথে-প্রান্তরে,মাঠে-ঘাটে,গাছে-বাশে ।আর আমাদের গ্রামের একটা মজার ব্যপার ছিল সব কিছুতেই ভিন্ন ভিন্ন খেলা।সব কিছু মিলে বেশ হৈ-হুল্লুড করে শৈশব কাটিয়েছি।সেখানে কোন অপ্রাপ্তি কিংবা অপরিপূর্ণতা ছিল না।কানায় কানায় পরিপূর্ণতা আর অসীম প্রাপ্তির সমন্বয়ে আমার শৈশব।তখন যদিও এসবের তেমন মূল্যবোধ বুঝতাম না।কিন্তু জীবনের এই সময়টাতে এসে পেছনে ফেলে আসা স্মৃতি মনে করতেই অকপটে ভেসে উঠে গ্রামের মধুময় স্মৃতি
। আজ এই দূর প্রবাসে দলইর গাঁও মাটি ও মানুষকে সত্যিই মনে পড়তেছে।
গ্রামের অবস্থান : আমাদের গ্রামের নাম দলইর গাঁও । এটি সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একটি জনপ্রিয় ও বৃহত্তর গ্রাম । গ্রামের দুপাশের প্রাকৃতিক শােভা এ গ্রামকে অপূর্ব সৌন্দর্য দান করেছে। সিলেট শহর থেকে সড়ক পথে খুব সহজেই আমাদের গ্রামে আসা যায়।
গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য : আমাদের গ্রামখানি ছবির মতাে। নানাজাতের গাছপালায় সুসজ্জিত আমাদের এই গ্রাম। ঝােপঝাড় লতাপাতার নিবিড় ঘনিষ্ঠতা সবার মন কেড়ে নেয়। পাখপাখালির কলকূজনে সব সময়ই মুখর থাকে গ্রামখানি। দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ, ধান-কাউনের হাতছানি, নিঝুম দুপুরে বটের ছায়ায় রাখালের বাঁশি উদাস করে মনপ্রাণ। দিঘী-ডােবা, বিল-ঝিল- কী এক অপূর্ব সৌন্দর্যের সঞ্চয়!
গ্রামের মানুষ : আমাদের দলইর গাঁও গ্রামে মুসলমান এবং হিন্দু ধর্মের একটি পরিবার বাস করে। আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক কোনাে ভেদাভেদ নেই। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই সব মানুষ এখানে সুখে-শান্তিতে বসবাস করে।
গ্রামের মানুষের জীবিকা: আমাদের গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই প্রবাসী, পাথর ব্যবসায়ী ও কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। কিছু মানুষ লেখাপড়া শিখে শহরে চাকরি করে। তবে সে সংখ্যা নিতান্তই কম। এছাড়া কিছু মানুষ দিনমুজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে।
গ্রামের অর্থনৈতিক উৎস : বাংলাদেশের বেশিরভাগ গ্রামের মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল। তবে আমাদের গ্রামের চিত্র একটু ভিন্ন। গ্রামের বেশিরভাগ পরিবারেরই একজন করে দেশের বাইরে থাকে। তাদের পাঠানাে। বৈদেশিক মুদ্রা এ গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থাকে মজবুত করেছে । এছাড়া কৃষিজাত পণ্য যেমন : ধান, পাট, গম ও নানা ধরনের সবজি তরকারি বিক্রি করেও গ্রামের মানুষ অর্থ রােজগার করে। প্রতি রবিবার ও বুধবার দলইর গাঁও গ্রামে হাট বসে।
গ্রামের প্রতিষ্ঠান: আমাদের গ্রামে অন্তর্গত একটি কারিগরি কলেজ, তিনটি সরকারি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একমাত্র টাইটেল মাদরাসা এবং একটি দাখিল মাদরাসাও রয়েছে। আরাে রয়েছে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও তিনটি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে । ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭ টি মসজিদ এবং পাশের গ্রামের রয়েছে একটি পােস্ট অফিস।
স্বাধীনতা সংগ্রামে গ্রামের অবদান : মহান মুক্তিযুদ্ধে দলইর গাঁও গ্রামের মানুষের অবদান অনেক। এ গ্রামের মানুষের সাহসিকতা ও বীরত্বে পাকিস্তানি বাহিনী এ গ্রামে প্রবেশের খুব একটা সুযোগ পায়নি।
ওলী-আউলিয়া ও অনেক গুণীজনের জন্মস্থান দলইর গাঁও গ্রাম। আমাদের দলইর গাঁও গ্রাম আমার কাছে খুব প্রিয়। এ গ্রামের প্রকৃতি মায়ায় জড়ানাে। দলইর গাঁও গ্রামের মানুষ সহজ-সরল ও অতিথিপরায়ণ। জীবনের শেষ একটা ইচ্ছাই আমার শেষ সমাধি এই প্রিয় জন্মস্থান দলইর গাঁও গ্রামে যেন হয়